Skip to main content

Ronaldinho - The Magician

ঝাঁকড়া চুলের পিচ্চি একটা ছেলে একটি ম্যাচে একাই ২৩টা গোল দিয়ে ফেললো। মিডিয়া পাড়ায় হৈচৈ পড়ে গেলো। বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছেলেটিকে প্লেনে তুলে দিলেন ব্রাজিলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলার জন্য। সেখানেও কীর্তিমাত! ট্রফি নিয়ে ছেলেটি বাড়ি ফিরে এলো।

ঝাঁকড়া চুলের সেই খেলোয়াড়টি আর কেউ নয়, তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বসেরা খেলোয়াড়দের একজন। তিনি রোনালদিনহো। ক্ষিপ্র গতি, অসাধারণ ড্রিবলিং, দূরপাল্লার ফ্রি-কীক, মাথার কারুকাজ, চোখ বুঝে পাস সবকিছুতেই তিনি অনন্য।


Brazilian Magician


২০০১ সালে মাত্র ৫ মিলিয়ন ইউরো বিনিময়ে পি.এস.জি পাড়ি জমায় এই জাদুকর। কিন্তু জাদুকরের প্রতি পি.এস.জি কোচের কেমন যেন এক অবহেলা। অধিকাংশ ম্যাচ ব্যাঞ্চে বসেই কাটিয়ে দিতে হয়। হঠাৎ ভাগ্য বেশী ভালো হলে ম্যাচের শেষ মূহুর্তে বদলি খেলোয়াড় হিসাবে খেলার সুযোগ জুটে।

২০০২ বিশ্বকাপ শুরু হতে আর কিছুদিন বাকী। ব্রাজিল কোচ ফিলিপ স্কলারি ২৩ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করে পুরো দেশে হৈচৈ ফেলে দিলেন। কারণ স্কোয়াডে রোমারিও নাম নেই। পুরো দেশের মানুষ রোমারিওর জন্য বিক্ষোভ শুরু করলো। এমনকি স্বয়ং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট কোচকে অনুরোধ করলো রোমারিওকে স্কোয়াডে রাখার জন্য। কিন্তু কোচের উত্তর, "I don't believe the voice of the people is always the voice of God."

স্কোয়াডে রোলানদিনহো নামের এক তরুণ তুর্কী আছে। তেমন কোনো বিশেষ কৃতিত্ব নেই তার। তবু কোচের অগাধ আস্থা ছেলেটির প্রতি। বিশ্বকাপে তাকে দেওয়া হলো ১১ নম্বর জার্সি। ইয়ে মানে! রোমারিওর ঐতিহাসিক ১১ নম্বর জার্সি। কোচ কি তাহলে রোমারিও পরিবর্তে তাকেই বেছে নিয়েছেন?

ছেলেটি কোচের অগাধ বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে কার্পণ্য করেনি। প্রতিটি ম্যাচেই তার জাদুকরী পায়ের ছোয়ায় ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে দিচ্ছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে মাইকেল ওয়েনের গোলে ব্রাজিল যখন প্রায় হারতে বসেছিলো তখন দূত হয়ে দাঁড়ালো জাদুকরের পা। চোখ ধাঁধানো এক ফ্রী-কীক গোলে দলকে উদ্ধার করেন। সবশেষে বিশ্বকাপটা নিয়েই বাড়ি ফিরেন।

জাদুকর এবার পি.এস.জি থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি জমালেন। তিনি যখন বার্সায় এসেছিলেন তখন পুরো স্প্যানিশ লীগ রিয়াল মাদ্রিদের একাই রাজত্ব। জাদুকর এসে বার্সার নতুন ইতিহাস লিখলেন। বার্সার নতুন এক অধ্যায় তৈরী করলেন। ফুটবলকে নিয়ে একাই রাজত্ব করা শুরু করলেন।

দীর্ঘ ৫ বছর পর বার্সেলোনার ঘরে লালীগা শিরোপা তুললেন। তার চেয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্বাদ পেলো রোলানদিনহোর একক কৃতিত্বে। আর অহরহ ট্রফির হিসাব না হয় এ যাত্রায় বাদ দেই।

জাদুকর কেমন খেলতেন সেটার বিবরণ দিতে চাই না। শুধু একটা ঘটনা বলতে চাই। একবার এল-ক্লাসিকো খেলতে সান্টিয়াগো বানাব্যুতে গিয়েছিলেন রোনালদিনহো। তার খেলা দেখে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকরা এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, পুরো বানাব্যু স্টেডিয়ামের সমর্থকরা একসাথে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানায়। বানাব্যুর দর্শকরা আর কারো জন্য এমন কোনো অভিবাদন কখনো হবে কি না কে জানে!

সেদিন এই অভিবাদনের পর জাদুকর বলেছিলেন, "I will never forget this because it is very rare for any footballer to be applauded in this way by the opposition fans."

জাদুকর বার্সেলোনায় মাত্র চার বছর খেলেছিলেন। এই ৪ বছরেই তিনি পাল্টে দেন বার্সার ফুটবল ইতিহাস। নিজে অর্জন করেন ফুটবলের ব্যক্তিগত সকল ট্রফি। বার্সেলোনাকে উজাড় করে দেওয়ার মত আর কিছুই বাকী ছিল না তার। আর নতুন করে গড়ে তুলেন বার্সেলোনার এক বিরাট সমর্থকগোষ্ঠী।

জাদুকরের জীবনে সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়তো সময়ের সবচেয়ে সেরা ফর্মে থেকেও ২০০৬ সালে ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ না জেতা। ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার দিনটা হয়তো তার ফুটবল ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ব্যর্থ দিন।

২০০৮ সালে জাদুকর বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দেন এসি মিলানে। তখন তার ২৯ বছর বয়স। বয়সের ভাড়ে, ব্যক্তিগত খামখেয়ালি জীবন আর ইঞ্জুরিতে দু'পায়ের জাদুগুলোও দিন দিন হারাতে শুরু করে। তিনি এতটাই অফ-ফর্মে চলে গিয়েছিলেন যে ২০১০ বিশ্বকাপে কোচ দুঙ্গা তাকে ব্রাজিল স্কোয়াডে ডাকার প্রয়োজনই মনে করেনি।

১১ মে ২০১০ সালে, দুঙ্গা যেদিন ব্রাজিলের স্কোয়াড ঘোষণা করেন সেদিন হয়তো তার ফুটবল জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন ছিল। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে না জড়াতে পারার কষ্টে হয়তো মুখ লুকিয়ে কেঁদেছেন। শুধু তিনি নয়, তার সাথে কেঁদেছিল কোটি দর্শক হৃদয়।

কষ্টের স্মৃতিটা হয়তো নিদারুণ ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক ১ মাস পরের স্মৃতিটা হয়তো তার ফুটবল জীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটা দিন ছিল। কারণ সেদিন জাদুকর এসি মিলানের জার্সি গায়ে 'জন গ্যাম্পার ট্রফি' ফাইনাল খেলতে নু-ক্যাম্পে খেলতে গিয়েছিলেন।

মাঠে প্রবেশ করার পর তাকে নু-ক্যাম্পের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। পুরো স্টেডিয়ামের মানুষ তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছিলো। সেই মাঠ, চেনা দর্শক, চেনা সতীর্থ। সারিতে দাঁড়িয়ে যখন স্টেডিয়ামে তাকালেন তখন তার চোখে আনন্দের অশ্রু। তার পায়ে বল গেলে স্টেডিয়াম থেকে সেই পুরোনো চিৎকারগুলো ভেসে আসছিল। দিনহো যেন তাদের দলেরই একজন।

ম্যাচের '৭৬ মিনিটে তাকে বদলি করার সময় তিনি তার এসি মিলানের জার্সি খুলে ফেলেন। দু'হাত উঁচু করে দর্শকদের কৃতজ্ঞতা জানান। আর গায়ের সাদা গেঞ্জিটাতে স্পানিশ ভাষায় লেখা ছিল, 'Barca te amo'. যার অর্থ, 'Barca I Love You'.

ম্যাচ শেষে ঘটলো আরেক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ম্যাচটি জিতেছিল বার্সেলোনা। ম্যাচ ট্রফিটা ক্যাপ্টেন পুয়োল হাতে নেওয়ার পর কাউকে যেন খুঁজতেছিলেন। হ্যাঁ, তিনি তার পুরোনো বন্ধু রোনালদিনহোকে খুঁজতেছিলেন। পুয়োল ট্রফি হাতে দৌড়ে গিয়ে তাকে কাছে ডাকেন। তারপর ট্রফিটা সর্বপ্রথম জাদুকরের হাতেই তুলে দেন। ট্রফি হাতে বিপক্ষ দলের সাথে জয় উদযাপন এ যেন ইতিহাসে অনন্য এক ঘটনা। আর ম্যাচ শেষে মেসি ছুটে যান তার কাছে খুলে ফেলা জার্সিটা সংগ্রহ করতে।

দীর্ঘদিন ব্রাজিল দলে তিনি উপেক্ষিত ছিলেন। অবশেষে ফিলিপ স্কলারি কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরোনো শিষ্যকে হঠাৎ করেই স্মরণ করেন। ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ১৫০ বছর পূর্তিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে তিনি দলে ডাক পেয়েছিলেন। আর সেটি ছিলো ব্রাজিলের জার্সিতে তার ১০০ তম ম্যাচ।

ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে দলের ক্যাপ্টেন নেইমার হঠাৎ কোচ স্কলারির নিকট বিশেষ এক অনুরোধ নিয়ে হাজির হলেন। নেইমার কোচকে জানালেন, 'তিনি ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচে ঐতিহাসিক ১০ নম্বর জার্সি এবং ক্যাপ্টেন আর্মব্যান্ড পড়ে খেলতে ইচ্ছুক না। ১০ নম্বর জার্সিতে জাদুকর দিনহোকে খেলানোর অনুরোধ করেলেন।'

নেইমারের সেই মিষ্টি অনুরোধ সহসাই গ্রহণ করা হলো। এফ.এ কমিটিও ব্রাজিল ফুটবলকে বার্তা প্রেরণ করলেন, তারা রোনালদিনহোকে গ্র্যান্ড প্রেসেন্টেশনের মাধ্যমে বরণ করে নিতে চান। ৬ জুন ২০১৩, ৯০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ১০ নম্বর জার্সির মাধ্যমে রোনালদিনহোকে উষ্ণ অভিবাদন জানায় ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

যুগে যুগে ফুটবল ইতিহাসে অনেক কৃত্বিমান খেলোয়াড় জন্ম নিয়েছে। অনেকে অনেক কৃত্বিমান রেকর্ড তৈরী করেছেন। কিন্তু ফুটবলে মাত্র একজন খেলোয়াড়ের জন্ম হয়েছে যিনি ফুটবল খেলার স্টাইলে নতুন এক ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি জাদুকর রোনালদিনহো।

সবশেষে বলতে চাই, রোনালদিনহো এমন একজন খেলোয়াড় যাকে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকরাও ঘৃণা করার সাহস পায় না। রোনালদিনহো এমন একজন খেলোয়াড় যার কোনো রাইভাল নেই ফুটবলে। তিনি ছিলেন এমন এক খেলোয়াড়, যার খেলা দেখে কারো মনে কখনো হিংসা হয়নি শুধু মুগ্ধই হয়েছেন। তিনি আমার কাছে ফুটবলের একজন পারফেক্ট ম্যাজিশিয়ান ছাড়া আর কিছুই না।

I’d never seen a player like that. It was my early knockings in the Champions League and seeing him play was like, 'Wow, this player is from a different planet to the rest of us.
- Frank Lampard

Comments

Popular posts from this blog

The Unknown City : Howrah

An old picture of Howrah Bridge Courtesy : পুরানো কলকাতার চালচিত্র - Old Calcutta City of Joy ,Kolkata was established  with three villages Gobindpur Sutanuti & Kolkata more than 300 years ago ; but Howrah City was more than 500 years old,was established with Shibpur Salkia Batore Ichapur Villages. The Howrah city called "Sheffield of India". Howrah is the second largest city after Kolkata. It has thousands of years of rich heritage in the form of the great Bengali kingdom of Bhurshut. Factories : First manufacturing plant of India was established in 1820 at Howrah Bauria. Keshab Chandra Majhi founded the primary welding factory at Howrah in 1857. Roads : The first paved road was built in 1779 at Howrah Bally from Salkia along the Ganges. Courtesy : পুরানো কলকাতার চালচিত্র - Old Calcutta Sports : The sports of Howrah city is incredibly ancient. In 1877 the primary contact sport was started in Howrah. The first c...

UNKNOWN FACTS ABOUT RABINDRANATH TAGORE

1st Non-European to win a NOBEL LITERATURE Prize : Rabindranath Tagore wasn't just the 1st Asian to win a Nobel prize, but also the 1st Non-European to mark his presence in literature Tagore Inspired 3 National Anthems : Many people are aware that Tagore wrote 2 National anthems. ''Jana Gana Mana'' for India and "Amar Sonar Bangla" for Bangladesh. What many people don't know is that he also Inspired the Srilankan National Anthem "Srilanka Matha" some even hold a view that Tagore composed the anthem in its entirely. He made a School from his Nobel Prize : Tagore invested his Nobel Prize money in constructing the Visva-Bharati School in Shantiniketan. The School ran on the Shantiniketan education system and gave the Nation many distinguished personalities Amartya Sen, Satyajit Roy & Indira Gandhi to name a few out of many others. Preface of Gitanjali is written by W.B.Yeats : The Preface of Tagore's most acclaimed work,Gitan...

Lionel MESSI

Lionel Andrés Messi Cuccittini জন্ম: ২৪ জুন ১৯৮৭ (বয়স ৩৩) জন্ম স্থান: রোজারিও, সান্তা ফে, আর্জেন্টিনা উচ্চতা : ১.৬৯ মি (৫ ফু ৬ ১⁄২ ইঞ্চি) মাঠে অবস্থান ফরোয়ার্ড বর্তমান ক্লাব বার্সেলোনা জার্সি নম্বর ১০ ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহর এ জন্মগ্রহণ করেন আধুনিক ফুটবল এর রাজপুত্র লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। তাঁর ফুটবল এর হাতেখড়ি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্ডলি র হয়ে,সেখান থেকে নিউ ওয়েলস ওল্ড বয়েজ এ যোগদান করেন। এই ছোট্ট বয়সেই বিশেষজ্ঞদের স্তম্ভিত করেন।তারপর হঠাৎ জীবনের ছন্দপতন।১১বছর বয়সে তাঁর ধরা পরে গ্রোথ হরমোন এর সমস্যা। প্রশ্ন উঠে যায় এখানেই কি শেষ?? . . . . না,তিনি যে হারতে শেখেননি। তৎকালীন বার্সা ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেকস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পেরে তাকে বার্সেলোনা তে আসার অনুরোধ জানান।তিনি আরও বলেন মেসির চিকিৎসার যাবতীয় খরচা বার্সেলোনা বহন করবে। . . এরপরই ছোট্ট মেসি বাবার সাথে আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্পেন এর পথে পাড়ি জমান।স্পেন এ এসে যোগদান করেন বার্সালোনার যুব একাডেমি লা মাসিয়া তে।এরপর আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি। . . . . দ...